ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে ধেয়ে আসছে ঝড় আমফান ।
মঙ্গলবার উপকূলের জেলা মূলত চট্রগ্রাম খুলনা বরিশাল উত্তর ও দক্ষিণ রাজ শাহী বিভাগের কিছু অংশ এবং পূর্ব উপকূলের সর্বত্র ঝড়ো হাওয়া বইবে সঙ্গে বৃষ্টি শুরু হবে। ঘূর্ণিঝড় 'আমফান'এর জেরে আগামী সোমবার ও মঙ্গলবার পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় উপকূলের জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করল আবহাওয়া দফতর। মৎস্যজীবীদের সোমবার থেকে উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যারা গভীর সমুদ্রে আছেন তাদের ১৭ তারিখ রাতের মধ্যে ফিরে আসতে হবে নতুবা বিপদে পড়বে।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ ক্রমশ শক্তি সঞ্চয় করে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরের মধ্য অংশে রয়েছে। সেখানেই এই নিম্নচাপ গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। দক্ষিণ ও মধ্য বঙ্গোপসাগরেই শনিবার সন্ধ্যায় এই গভীর নিম্নচাপ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। থাইল্যান্ড এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম দিয়েছে আমফান। রবিবার পর্যন্ত আমফান উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হবে। সোমবার এটি অভিমুখ পরিবর্তন করে উত্তর ও উত্তর পূর্ব দিকে অগ্রসর হবে।
শনিবার দক্ষিণ ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে আমফানের গতিবেগ হবে ঘণ্টায় ৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত। রবিবার আরফানের গতি বেগ বেড়ে হবে প্রতি ঘন্টায় ৯০ কিলোমিটার । সোমবার এটি মধ্য বঙ্গোপসাগর এবং দক্ষিণ ওড়িশা ও উত্তর অন্ধ্রপ্রদেশ উপকূলের কাছাকাছি থাকবে। সোমবারের গতিবেগ মধ্য বঙ্গোপসাগরে ৯০ কিলোমিটার এবং অন্ধ্র ও উড়িষ্যা উপকূলে ৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় ঝড়ো হাওয়া বইবে। ১৯ তারিখ অর্থাৎ মঙ্গলবার এটি আরও একটু এগিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশা উপকূলের কাছাকাছি উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করবে। এই সময়ে উত্তর ও মধ্য বঙ্গোপসাগরের ভেতরে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার।অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ ওড়িশা উপকূলে এর গতিবেগ ঘণ্টায় ৮০ কিলোমিটার হবে।আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন বুধবারের নাগাদ এই ঘূর্ণিঝড় আমফান স্থলভাগের প্রবেশ করতে পারে। তবে কোথায় কিভাবে স্থলভাগের প্রবেশ করবে তা এখনও জানাতে পারেননি আবহাওয়াবিদরা।
দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম ‘আম্ফান’।
শনিবার রাত সাড়ে ৯টায় সাংবাদিক দের আবহাওয়াবিদ মনোয়ার বলেন, ‘দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়তে তিন থেকে চারদিন সময় লাগবে।’
এদিকে আজ সন্ধ্যা ৬টায় আবহাওয়া অধিদফতর তাদের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও সামান্য পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে।
এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৩৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এর আগে সন্ধ্যা য় পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম সাংবাদিক দের বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ইতোমধ্যেই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। নিম্নচাপটি শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত সুস্পষ্ট নিম্নচাপ হিসেবে ছিল। রাতে সেটি গভীর নিম্নচাপের পরিণত হয়। গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে ।